বর্তমানে অ্যানিমেশন (Career in Animation) একটি জনপ্রিয় টেকনিক্যাল লাইন । এই চাকরিটি অনেক মানুষের কেরিয়ারের অপশন হয়ে উঠেছে। শুধু সিনেমা বা টিভিতে নয়। আজকাল অ্যানিমেশন বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন ভিডিও গেম ,বিজ্ঞাপন ,ই লার্নিং কনটেন্ট ,সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট ,মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহারিত হচ্ছে।
বর্তমানে কোন কোন চাকরির প্রশিক্ষণ নেওয়া ভালো
অ্যানিমেশন শিখে চাকরি পাওয়ার পথটি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও সঠিক প্রস্তুতি দক্ষতা অর্জন এবং ক্রিয়েটিভিটি থাকলে আপনি ক্ষেত্রের মধ্যে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবেন। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
১. অ্যানিমেশন :
অ্যানিমেশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে স্থির একটি চিত্র বা ডিজাইন গুলিকে জীবন্ত বা চলমান আকারে পরিচালনা করা যায়। এটি 2D বা 3D আকারের হতে পারে এবং বিভিন্ন মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে যেমন টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, ভিডিও গেম, বিজ্ঞাপন এবং সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্টে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
২. অ্যানিমেশন এর গুরুত্ব :
অ্যানিমেশন বর্তমানে বেশিরভাগ ইন্ডাস্ট্রি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কেটিং, ই লার্নিং, ভিডিও কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে অ্যানিমেশন এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং অ্যানিমেশন দক্ষতা জনগণকে আজকের দিনে চাকরির বাজারে একটি প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদান করতে পারে।
৩. অ্যানিমেশনের শিক্ষাগত যোগ্যতা :
অ্যানিমেশন শিখতে গেলে কিছু কিছু বিষয়ের ওপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে জানি আমরা আলোচনা করা হলো।
- বেসিক অ্যানিমেশন প্রিন্সিপলস :
অ্যানিমেশনের মূলনীতি যেমন এফেক্ট, টিঙ্কিং , টাইমিং, স্পেসিং, আর্চেস ইত্যাদি শেখ রাখ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইসব মৌলিক বিষয় বুঝে না নিলে animation তৈরি করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে ।
- অ্যাডোবি সফটওয়্যার: অ্যানিমেশন তৈরি করতে সাধারণত Adobe animate , Adobe after effect , ADO premier Pro ইত্যাদি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে । এই সফটওয়্যার গুলোর প্রতি অভিজ্ঞতা থাকলে আপনি আরো দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে এই বিষয়ে কাজ করতে পারবেন।
- 3D অ্যানিমেশন সফ্টওয়ার :
বর্তমানে 3D অ্যানিমেশন একটি জনপ্রিয় ট্রেন্ড। এই ক্ষেত্রে এই সফটওয়্যার গুলির ব্যবহার করতে হবে যেগুলি হল Autodesk Maya , Blender , Cinema 4D ইত্যাদি । 3D অ্যানিমেশন শিখতে হলে আপনাকে 3D মডেলিং, রেন্ডারিং এবং টেক্সচারিং এর মতো বিষয়গুলি শিখতে হবে ।
- ক্রিয়েটিভিটি এবং গল্প বলার ক্ষমতা : অ্যানিমেশনের একটি মজবুত কাহিনী এবং কনসেপ্ট থাকা খুব জরুরী যা জনগণকে সৃজনশীল ভাবে আকর্ষণ করবে এবং গল্প বলার ক্ষমতা এনিমেশনকে জীবন্ত করে তোলে তাই গল্প লেখার দক্ষতা শিখতে হবে।
- অডিও এবং ভিজ্যুয়াল সিঙ্কিং :
অ্যানিমেশন শব্দ এবং ভিজুয়াল এর সঠিক সিঙ্কোনাইযেসন এর গুরুত্ব খুবই। আপনি যে অ্যানিমেশন তৈরি করবেন তার সাথে সঠিক অডিও, সাউন্ড এফেক্ট এবং মিউজিক যোগ করা ভালোভাবে শিখতে হবে ।
৪. বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স :
অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল আর্ট, অ্যানিমেশন, গ্রাফিক ডিজাইন, অথবা মাল্টিমিডিয়ার সাইজের উপস স্নাতক বা পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স এ ছাড়াও আরো নানান রকম কোর্স অফার করে থাকেন । যদি আপনি একাডেমিক ভাবে এই ক্ষেত্রেই ক্যারিয়ার তৈরি করতে চান তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে এই সমস্ত কোর্স ভর্তি হতে পারেন।
৫. ফ্রি টিউটোরিয়াল :
ইন্টারনেটে অনেক রকম ফ্রি টিউটোরিয়াল রয়েছে যা জনগণকে এনিমেশন শিখতে সহায়তা করবে। Blender Guru, the animators survival kit ইত্যাদি সাইটে অনলাইনে অনেক রকম কোড পাওয়া যেতে পারে।
৬. প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা অর্জন :
অ্যানিমেশন শিখিয়ে শুধুমাত্র থিওরিক্যাল যে জ্ঞান অর্জন করা যাবে তা নয় নানান রকম প্রাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা অর্জন করা যাবে। এটি আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে এবং চাকরির জন্য প্রস্তুতি হতে সাহায্য করবে।
- ছোট প্রকল্পের কাজ করুন :
প্রথমে ছোট এনিমেশন প্রজেক্ট তৈরি করুন যেটাতে animated লোগো, শর্ট ভিডিও বা সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য অ্যানিমেটেড পোস্ট তৈরি করা যাবে।
- ফ্রিল্যান্সিং :
অনলাইনে ফ্রিল্যান্স িং এর কাজ করে অ্যানিমেশন শিখতে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভালো পন্থা আপনি upwork, fiverr , Freelancer এ্যানিমেশন সম্পর্কে কাজ পেতে পারেন। এই বিষয়ে কাজ করতে করতে বাস্তব অভিজ্ঞতা ভালোভাবে অর্জন করতে হবে এবং শক্তিশালী একটি পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে।
- ইন্টার্নশিপ :
অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন অ্যানিমেশন স্টুডিও ডিজিটাল এজেন্সি ইত্যাদি এবং তাদের প্রজেক্ট এর জন্য নানান রকম ইন্টার নিয়োগ করতে হবে। আপনি ইন্টার্ন হিসাবে কাজ করে অনেক কিছু শিক্ষা অর্জন করতে পারেন এবং ভবিষ্যতে চাকরি পাওয়ার সুযোগ সুবিধা পেতে পারেন।
৭. পোর্টফোলিও তৈরি করুন :
অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রে পোর্টফোলিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস । এটি আপনার কাজের প্রতি দক্ষতা এবং সৃজনশীলতার প্রতিফলন হিসেবে কাজ করবে। তাই আপনার তৈরি করা অ্যানিমেশন গুলোর একটি ভাল পোর্টফোলিও তৈরি করুন যা আপনি চাকরির জন্য আবেদন করার সময় আপনার নিয়োগকর্তাকে দেখাতে পারবেন।
৮. চাকরি খোঁজার প্ল্যাটফর্মে এক্টিভ থাকুন :
অ্যানিমেশন পিকে চাকরি পেতে গেলে আপনাকে প্রথমে বিভিন্ন চাকরি খোঁজা প্ল্যাটফর্মে একটিভ থাকতে হবে। সাইট গুলি যেমন – LinkedIn, indeed, glass door, BD job এ্যানিমেশন সম্পর্কিত চাকরি খুঁজতে হবে। এখানে চাকরির বিজ্ঞপ্তি আপডেট হয় এবং আপনি নিয়মিত পজিশনের জন্য আবেদন করতে পারেন।
৯. শুধুমাত্র এনিমেশন নয় ডিজিটাল মার্কেটিং ও মিডিয়া ফিল্ড এর যোগ্যতা বৃদ্ধি করুন :
অ্যানিমেশন হচ্ছে এখন শুধুমাত্র সিনেমা বা ভিডিও এছাড়াও গেমে ব্যবহৃত হচ্ছে না বরং এটি ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট, ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই আপনি যদি ডিজিটাল মিডিয়া বা মার্কেটিং ফিল্ডে মতো পদে চাকরি করতে চান তবে আপনার অ্যানিমিশনের স্কিলের সাথে মার্কেটিং , সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট ইত্যাদি তৈরির দক্ষতা অর্জন করুন।
অ্যানিমেশন একটি অত্যন্ত সৃজনশীল কাজ এটি শিখে অনেক মানুষ তার কেরিয়ার তৈরি করতে পারে তবে এটি শিখতে এবং সফল হতে কিছু পরিশ্রম এবং সময় দিতে হবে। যে সমস্ত আগ্রহী প্রার্থীরা অ্যানিমেশন কি খেয়ে চাকরি পেতে চান তাদেরকে সঠিকভাবে স্কিল অর্জন করতে হবে practical অভিজ্ঞতা এবং একটি শক্তিশালী পোর্টফোলিও তৈরির মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।